ইসলামী ব্যাংক লোন নেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন

সকল ব্যাংক লোন সমূহের মধ্য ইসলামী ব্যাংক লোন কিছুটা অন্যরকম। যেহেতু ইসলামি ব্যাংক সম্পূর্ণ ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হয় সেজন্যে ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতিও ভিন্ন। যদিও ব্যাংকিং সেক্টরকে সম্পুর্ণ সুদমুক্ত মানতে আলেমগন রাজি নয়, তবুও কিছু কিছু ইসলামিক স্কলার ইসলামি ব্যাংক এর সেবাকে ধর্মীয় দিক থেকে বৈধ মনে করেন। ইসলামে সুদকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করায় অনেকে প্রয়োজনের সময় কেবল ইসলামী ব্যাংকেই বেচে নেয়। যদিও এখানে সুদের কোনো ব্যবহার হয় না তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি না। তো যাই হোক সে আলোচনায় না গিয়ে এখন জেনে নেওয়া যাক ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে।
ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতি
কালের বিবর্তনে আধুনিক ছোঁয়ায় পরির্তন এসেছে মানুষের জীবন ধারায় । যেমন মধ্যযুগে কৃষকেরা উচ্চ সুদে ঋন নিতো জমিদার বা মহাজন থেকে আর দিতে হতো জমির খাজনা । এই খাজনা পরিশোধ না করতে পারলে হারাতে হত সব। কিন্তু কালের বিবর্তনে মহাজনী প্রথা আজ বিলুপ্ত। সেসব ঋন এখন বানিজ্যিক ব্যাংক লোন পরিনত হয়েছে । সাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে প্রতিনিয়ত অর্থের বা টাকার প্রয়োজন । এই প্রয়োজনীয় অর্থ বাংলাদেশের সকল ধরনের কমার্শিয়াল ব্যাংক সমূহ ঋণ সুবিধার মাধ্যমে দিতে পারে। কিন্তু ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ব্যাংক লোন প্রদান করে ইসলামী ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতিতে ঋণ গ্রহনের নীতিমালা
অবকাঠামোগত ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকের ঋণ প্রদান সুবিধা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্য ভূমিকা পালন করে । বহু মানুষ শুধু ঋন নিয়ে জীবনে সফল হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দূর্ঘটনা বা অসুস্থতায় মানুষের ঋনের প্রয়োজন পড়ে। এই ব্যাংক লোন গ্রহনের ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা রয়েছে যা মেনে চলে যেকোনো ব্যাক্তি ঋণ সুবিধা গ্রহন করতে পারে। নীতিমালাসমূহ হলো-
১. ঋণ গ্রহীতাকে অবশ্যই ১৮ বছর বা তার অধিক বয়সী হতে হবে।
২. ঋণ গ্রহীতার ইসলামী ব্যাংকে একটি সক্রিয় একাউন্ট থাকতে হবে।
৩. অবশ্যই ঋণ গ্রহীতার ভোটার আইডি কার্ড অর্থাৎ জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ব্যাংকের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি সাথে থাকতে হবে।
৪. ঋণ গ্রহীতা যেরকম সুবিধা নিতে চায় সে অনুযায়ী ঋণ গ্রহনের শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক যেসকল ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকে
গ্রাহকদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ঋণ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক অন্যতম। গ্রাহকদের ইসলামী ব্যাংক যে ঋণ সুবিধাগুলো দিয়ে থাকে তা হলোঃ
১. ইসলামী ব্যাংক হোম ঋণ সুবিধা।
২. ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারণে ঋণ সুবিধা।
৩. কৃষি ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধা।
৪. ফ্রিল্যান্সিং ঋণ সুবিধা।
৫. শিল্প খাতে ঋণ সুবিধা।
৬. রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ঋণ সুবিধা।
ব্যাংক সমূহের ভিন্নতার কারনে প্রতিটি ব্যাংকের ঋণ প্রদানের সুবিধা সমূহের মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তেমনি ইসলামী ব্যাংকেও ঋণ সুবিধা প্রদানে ভিন্নতা দেখা দেয়। তাহলে ইসলামী ব্যাংকের ঋণ ক্ষেত্রগুলো নিয়ে কিছু বলা যাক।
১. ইসলামী ব্যাংক হোম ঋণ সুবিধা
ইসলামী ব্যাংক হোম ঋণ সুবিধার ক্ষেত্রে গ্রাহককে সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকার ঋন সুবিধা প্রদান করে থাকে। তাছাড়াও গ্রাহক যদি পুরাতন বাড়ি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে লোন নিতে চায় তাহলে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকার লোন নিতে পারে। উল্লেখ্য, গ্যারান্টার হিসেবে সর্বোচ্চ ২ জন হতে পারেন।
লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজ সমূহ
➤বায়া দলিল।
➤সি এস,এস এ,বি এস খতিয়ান।
➤ডি সি আর,নামজারী রশিদ,খতিয়ান।
➤এনইসি।
২. ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারণে ঋণ সুবিধা
ব্যবসা বানিজ্য একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচার ও প্রসারণের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা দ্রূত ঘুরে।
দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ী গ্রাহকদেরকে ঋণ সুবিধা প্রদান করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদন হতে শুরু করে পণ্য মজুদকরণ পর্যন্ত সকল সুবিধা দিয়ে থাকে।
ইসলামী ব্যাংকের আওতায় এই ঋণ সুবিধা গ্রহনের ক্ষেত্রে যা প্রয়োজন
➤জাতীয় পরিচয় পত্র।
➤ট্রেড লাইসেন্স।
➤ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দলিল।
➤ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজ পত্রাদি।
৩.কৃষি ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধা
ইসলামী ব্যাংক লোন পদ্ধতিতে কৃষি ক্ষেত্রে ঋণ সুবিধা প্রদান করে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে তথা কৃষকদের উন্নয়নের এবং কৃষি উদ্যোক্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক ঋণ সুবিধা প্রদান করে থাকে। উৎপাদন সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আর এই উতপাদনের কাজটি করতে হয় কৃষকদের। কৃষকরা নিতান্তই দরিদ্র হয় তাই তাদের ফসল উৎপাদন শেষ করা পর্যন্ত ঋনের দরকার হয়। ব্যাংকের বাড়তি সুবিধাসহ কৃষি ঋণ কৃষকের জন্যে অত্যন্ত উপকারী। কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবনে তরুণরাও কৃষি ক্ষেত্রের দিকে মনোনিবেশ করছে।
এই ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহনের জন্য যা যা প্রয়োজন
➤জমির প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র।
➤জাতীয় পরিচয় পত্র।
➤অভিজ্ঞ লোক।
৪. ফ্রিল্যান্সিং ঋণ সুবিধা
ডিজিটাল যুগে ফ্রিল্যান্সিং একটি স্বাধীন ও অধিক অর্থ উপার্জনকারী পেশা। বেকার যুবকরা এখন ফ্রীল্যান্সিং করে অনেক টাকা উপার্জন করার সুযোগ পাচ্ছে। তবে ফ্রীল্যান্সিং শুরু করার আগে কিছু বিষয় যেমন কোর্স করতে হয়, কয়েকটি ডিভাইস ক্রয় করতে হয়। এই ক্ষেত্রেও ইসলামী ব্যাংক ঋণ সুবিধা প্রদান করে তরুণদের আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করে। একজন ফ্রিল্যান্সারের ক্রয়কৃত পণ্যের যাবতীয় খরচ এই ঋণের আওতাভুক্ত হয়। নির্দিষ্ট সময় তথাপি ২ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করার বিধান দিয়ে থাকে।
ইসলামী ব্যাংক হতে ফ্রিল্যান্সিং ঋণ সুবিধা গ্রহনের ক্ষেত্রে যা প্রয়োজন
➤যদি গ্রাহকের কোনো জমিজমা থেকে থাকে তাহলে উক্ত জমির বৈধ কাগজ পত্রাদি।উল্লেখ্য ঐ জমির বাজার মূল্য ১ লক্ষ্য টাকার উপর হতে হবে।
➤গ্রাহককের একটি সক্রিয় ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।
➤জমি সংক্রান্ত বৈধ কাগজ প্রদান করতে হবে।
৫. শিল্প খাতে ঋণ সুবিধা
শিল্প খাতের উন্নয়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ইসলামী ব্যাংক এক্ষেত্রে এসএমই লোন প্রদান করে থাকে শিল্পখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে। আমার জানি যে একটি দেশের উন্নয়ন তখনই ঘটে, যখন কিনা ঐদেশের শিল্প খাতের উন্নয়ন হয়। ইসলামী ব্যাংকের এই ঋণ সুবিধা প্রদানের ফলে শিল্পখাতে বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে সাথে উদ্যোক্তাও বাড়বে এবং বেকারত্ব সমস্যারও লাগব হবে।
শিল্প খাতে ঋণ সুবিধা গ্রহনের ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন
➤জাতীয় পরিচয় পত্র।
➤ট্রেড লাইসেন্স।
➤প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ।
৬. রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ঋণ সুবিধা-
সময়ের পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের সাথে সাথে পাল্টেছে মানুষ, পাল্টেছে ক্রিয়াকলাপ,পাল্টেছে কাজের ধরন এমনকি পাল্টেছে ব্যবসার প্রকরণ । যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে যেমন উদ্ভব হয়েছে নতুন ব্যবসা তেমন বিলুপ্তি ঘটেছে বহু ব্যবসার। রিয়েল এস্টেট ব্যবসা নবউদ্ভাবিত ব্যবসা সমূহের মধ্যে অন্যতম। অল্প সময়ে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । আর এই ব্যবসা সম্প্রসারনের লক্ষ্যে ইসলামী ব্যাংক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের ঋণ সুবিধা প্রদান করে থাকে। ব্যবসার উন্নয়নের লক্ষ্যে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা ঋণ সুবিধা গ্রহন করতে পারবে।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ঋণ সুবিধা গ্রহনের ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন
➤সক্রিয় ব্যাংক একাউন্ট।
➤মালিকগণের জাতীয় পরিচয় পত্র।
➤ব্যাংক ও কম্পানির প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র।
➤জমি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দলিল।
পরিশেষে
ব্যাংক ঋন সুবিধা থাকার কারনে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন ঘটছে শুধু তাই নয় দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদ্যোক্তা বাড়ার সাথে সাথে বিনিয়োগও বাড়ছে। যেহেতু আমাদের দেশ উন্নয়নশীল দেশ। দেশের ৬০ শতাংশ খেটে খাওয়া মানুষ। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা গ্রামীণ জনজীবন উন্নয়ন সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।